অবৈধ ট্রাক্টরচাপায় পিষ্ট লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট ও কালভার্ট। এসব চালকের কোনো লাইসেন্সও নেই। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ছয় মাসে ট্রাক্টর চাকায় পিষ্ট হয়ে জেলায় মারা গেছে ১৫ জন, আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।
রাস্তায় এসব অবৈধ ট্রাক্টর চলাচল বন্ধে জেলাবাসী বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করেছে। গত বৃহস্পতিবার জেলার কমলনগর উপজেলার সুতারগোপ্তা-চরমনসা সড়কে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।
জেলা বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত, রায়পুর-রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর সড়কসহ প্রতিটি সড়কে অবৈধভাবে চলাচল করছে প্রায় ৪ হাজার ট্রাক্টর। এসব যানবাহন ও চালকের কোনো ফিটনেস বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বেশির ভাগ চালকই কিশোর। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ট্রাক্টর চলাচল করছে।
উপজেলার সুতারগোপ্তা এলাকার ফাইভ স্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নোমান সিদ্দিকী জানান, সুতারগোপ্তা-চরমনসা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক্টর চলাচল করছে। এসব ট্রাক্টর কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচল করা এবং সড়কের বালুর কারণে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা পাঠদান করতে পারছে না। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুরো সড়কটি ভেঙে চুরমার করেছে এসব ট্রাক্টর।
কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচলের কারণে রাস্তা নষ্ট হয়ে যানচলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ। এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচল বন্ধে প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
কমলনগর উপজেলার চরলরেন্সের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও দুই-একটি মামলা দিয়ে দায়সারাভাবে তারা দায়িত্ব পালন শেষ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সর্বস্তরের মানুষ। দ্রুত এসব ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচল বন্ধ এবং প্রাণহানির হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার দাবি জানান জেলাবাসী।
সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মানিক বলেন, অবৈধ ট্রাক্টরের চাপায় পিষ্ট লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। নষ্ট হচ্ছে রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট। শুধু কুশাখালী ইউনিয়নে অন্তত কয়েক শ ট্রাক্টর চলাচল করছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোনে মন্টু বলেন, সড়কে চলাচলকারী ট্রাক্টরগুলোর কোন অনুমোদন নেই। জেলায় প্রায় ৪ হাজার ট্রাক্টর চলাচল করছে। যার একটিরও অনুমোদন নেই। এসব ট্রাক্টর কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য আনা হয়। পরে সেগুলো সড়কে মাটি কাটাসহ ইটভাটার কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো দ্রুত বন্ধ না হলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। এটা ব্যবহার করার কথা কৃষি কাজে। তারপরও আইন না মেনে রাস্তায় চলাচল করছে এসব যানবাহন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রাক্টরকে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post