গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ডেভিড মিলার। উইকেটে জমে যাওয়ায় আক্রমণাত্মক থেকে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠা তখন সময়ের দাবি। অতীতে বেশ কয়েকবার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন বলেই তো তাঁর নামের আগে যুক্ত হয়েছে ‘কিলার’ শব্দটি। রান তোলার তাড়নায় ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে চেয়েছিলেন বিশাল ছক্কা। তবে এ দফায় তাঁর ঘাতক বনে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
৪৬তম ওভারে মিলারকে ছেঁটে ফেলতেই মিরাজ-মুশফিকের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার আনন্দ! গ্রাস ব্যাংকে (ঘাসের গ্যালারিতে) প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসও ততক্ষণে চরমে।
নাহ, বাংলাদেশ তখনো জেতেনি। তবে মিলারের বিদায়ে ম্যাচটা পুরোপুরি মুঠোয় চলে এসেছে। একটু পর কেশব মহারাজকে রিভিউয়ের সহায়তায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলতেই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়িয়ে বাংলাদেশ জিতল ৩৮ রানে।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে দুই দলের প্রথম ওয়ানডেতে গত রাতে প্রোটিয়াদের ৩১৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল তামিমের দল। ফিফটি করেন সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলী রাব্বি। জবাবে মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলামদের অসাধারণ বোলিংয়ে স্বাগতিকরা গুটিয়ে যায় ২৭৬ রানে।
২০ বছর, ৫ সফর, ১৯ ম্যাচ—দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে তবু জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। ২০ বারের চেষ্টায় সেই বিব্রতকর ইতিহাস বদলে ফেলল লাল-সবুজরে প্রতিনিধিরা।
অবিস্মরণীয় এ জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আগামীকাল রোববার জোহানেসবার্গে জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ মুঠোয় পুরবেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
বোলিংয়ে মিরাজই সবচেয়ে সফল। ৯ ওভারে ৬১ রানে ৪ উইকেট নেন এই অফ স্পিনার। অথচ ইনিংসের মাঝপথেও পঞ্চম বোলার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল বাংলাদেশ। কারণ, নিজের প্রথম ৪ ওভারে ৩৮ রান দেন মিরাজ। পরে কী দারুণভাবেই না ঘুরিয়ে দাঁড়ান তিনি। ডানহাতি পেসার তাসকিন ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রানে শিকার করেন ৩ উইকেট। বাঁহাতি পেসার শরীফুল ৮ ওভারে ২ উইকেট পান ৪৭ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরুতেই বেকায়দায় ফেলেন এ দুই পেসারই।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে দলটি প্রথম ২০ ওয়ানডেতে তিনশ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ, সে দলটিই সর্বশেষ দুই ম্যাচে তা করে দেখাল। দুটিতেই পেল মধুর স্বাদ। ২০১৯ বিশ্বকাপে লন্ডনের দ্য ওভালে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩৩০ রানের পুঁজি গড়ে। ২০১৭ সালে কিম্বার্লিতে ২৭৮ রান ছিল প্রোটিয়াদের ডরোয় বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ।
সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরুটা মন্থর হলেও করলেও ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তামিম ও লিটন দাস। লিটন করেন ৫০ রান। অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৪১।
মানসিক অবসাদে এই সফরে যেতে চাননি যিনি, সেই সাকিবের ব্যাটেই মূলত গতি পায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৬৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তাঁরই হাতে। ইয়াসির রাব্বি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূরণ করেন ৪৩ বলে।
পরে তাসকিন, শরীফুল, মিরাজদের দারুণ বোলিংয়ে দুই দশকের দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরিয়েছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ
৫০ ওভারে ৩১৪/৭
সাকিব ৭৭, ইয়াসির ৫০, লিটন ৫০
মহারাজ ১/৫৬, ইয়ানসেন ১/৫৭, রাবাদা ১/৫৭
দক্ষিণ আফ্রিকা
৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ অলআউট
ডুসেন ৮৬, মিলার ৭৯, বাভুমা ৩১
মিরাজ ৪/৬১, তাসকিন ৩/৩৬, শরীফুল ২/৪৭
ফল : বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : সাকিব (বাংলাদেশ)
সিরিজ : বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে
Discussion about this post