রাকিব হোসেন মিলন
সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে অনেকেরই জানার তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিশোর বয়স থেকে অনেকেই এ পেশার মোহে পড়ে যেতে দেখা যায়। আজ এ পেশার বিষয়ে স্বল্প পরিসরে প্রাথমিক ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
মূলত সাংবাদিকতা পেশাটি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়, ঘটনা, সমস্যা এবং সম্ভাবনার তথ্য সংগ্রহ, অনিয়ম- দূর্নীতি তুলে ধরা, বিভিন্ন জন গুরুত্বপূর্ণ টপিকস বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করা হয়। সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য হলো সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আলোকিত করা।
সাংবাদিকতা একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। এর কারণ সাংবাদিকরা জনগণের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সত্যনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। তারা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল বিষয়ের উপর গবেষণা করে এবং সেই বিষয়গুলোকে সহজভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন। এতে জনগণ তাদের সঠিক মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পায়।
সাংবাদিকতা শুধু তথ্য সংগ্রহ বা উপস্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি বিশ্লেষণধর্মী ও সৃজনশীল পেশা। সাংবাদিকদের কৌতূহলী হতে হয় এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করতে হয়। এর জন্য তাদের গভীর জ্ঞান ও তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা থাকা জরুরি। তাদেরকে শুধুমাত্র ঘটনার তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং সেই ঘটনার কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধানও উপস্থাপন করতে হয়।
সাংবাদিকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ এবং হুমকির মুখে পড়তে হয়। এছাড়াও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাধাও পেরোতে হয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ‘ফেক নিউজ’ বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে, যা সাংবাদিকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতা সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে, তাদের অধিকার সম্পর্কে জানায় এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে। সাংবাদিকদের সঠিক ও তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলতে চাই, সাংবাদিকতা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সৃজনশীল পেশা, যা সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলো সঠিক ও নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন করা এবং জনগণকে সচেতন করে তোলা। এটি শুধু একটি পেশা নয়, বরং একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং, বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করছি।
Discussion about this post