রাকিব হোসেন মিলন।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে নদী বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই।যে কোনো মূল্যে দেশের সর্বত্র নদ-নদী, জলাশয়, খাল-বিল-পুকুর-হাওড়-বাঁওড়, জলাধার ইত্যাদি রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা করলেই হবে না, এগুলোর সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই এগুলো যাতে দখল কিংবা দূষণে জর্জরিত হতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান থাকা জরুরি। সরকারি প্রকল্পে উন্নয়নের নামে কোথাও এসব ভরাট করা যাবে না। যত্রতত্র নির্মাণ করা যাবে না বাঁধ-স্লুইসগেট-ব্রিজ-কালভার্ট। নদীর প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখাসহ জলাশয়-জলাধারগুলোতে সারা বছর যাতে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি কর্তৃকপক্ষসহ সর্বস্তরের মানুষকে। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, নদ-নদী জলাশয়-জলাধার মানুষের প্রাণ- শিরা-উপশিরা ও ধমনির মতো। হার্টে ব্লক হলে যেমন মানুষের দেহে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, একইভাবে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে হুমকির মুখে পড়বে নাব্য।
যা প্রকারান্তরে স্থানীয় জনপদ, চাষাবাদ, প্রকৃতি ও পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য তথা জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ক্ষতি ডেকে আনবে। নদী রক্ষায় শুধু তীর বা পাড় বাঁধাই করলে হবে না। কেননা, বাংলাদেশ একটি পলিবাহিত বদ্বীপ, পলি দিয়ে সৃষ্ট। সেজন্য নদী ও জলাশয় রক্ষায় ক্যাপিট্যাল ড্রেজিংয়ের পর প্রতি বছর মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নদী রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার অংশ হিসেবে করা হয় এসব। বর্তমান সরকার ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বদ্বীপ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যা পরে ২১০০ সাল পর্যন্ত দেশের পানিসম্পদ সুরক্ষা ও উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ –এ রূপান্তর করা হয়।
সোমবার রাজধানীর চারপাশের নদী-বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর দখল-দূষণ রোধ ও নাব্য রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত মাস্টার প্ল্যান সমীক্ষা প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন দেশবাসীকে। এর পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষাসহ বৃষ্টি পানি সংরক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের বিশ্ব পরিচিতি প্রধানত নদীমাতৃক হলেও এখন আর তা জোর দিয়ে বলা যায় না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে ১ হাজার ৭৪০টি নদীর অস্তিত্ব ছিল। নদী রক্ষা কমিশনের হিসাবে বর্তমানে ৭২০টি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। এর অধিকাংশই এখন দখল-দূষণে জর্জরিত, মৃতবৎ।
গত ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে প্রায় ৫০০ নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে আট হাজার খাল-বিল। দখল-দূষণ ও ভাঙনের কারণে জীবিকা হারিয়ে প্রতি বছর বাস্তুচ্যুত ও অভিবাসী হচ্ছে পাঁচ লাখ মানুষ- যারা প্রবেশ করছে ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে। চরাঞ্চলে বসবাসরত ১ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির সম্মুখীন। অপরিকল্পিত বাঁধ ও উড়াল সড়ক নির্মাণের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে হাওড় অঞ্চলও। ফলে, মৎস্য সম্পদের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন।
তবে ভালো লাগার ও আশার কথা এই যে, নদী রক্ষা কমিশন গত কয়েক বছর ধরে দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় কঠোর অবস্থান গ্রহণসহ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে নিয়মিত। অবৈধ দখলদারদের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতি জেলায়। যা দুঃখজনক তা হলো, সরকার ও নদী রক্ষা কমিশনের নানা উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ৬৮ শতাংশ দখল উচ্ছেদ করা যায়নি। কেননা, তারা ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। দখলমুক্ত করার কিছুদিন পরেই আবার তা দখল করে নেয় স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীরা।এসব প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক মহল থেকে নদীকে বাঁচাতে হবে।আগামীর তরুন প্রজন্ম কে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে দেশ প্রেম এ উদ্বুদ্ধ করে।দেশে ১৭ কোটি জনগণের থাকতে হবে প্রচন্ড দেশপ্রেম ও দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা। যে কোনো মূল্যে সমস্যার সমাধান করতে হবে নদ-নদী বাঁচাতে হলে।তাহলেই আমরা সুখী সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবো।
Discussion about this post