বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের লাঠিপেটায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ সময় বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন। পরে সেখানে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে’ দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে তাঁরা কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি ভাঙচুর করেন। এরপর শিল্পকলা ও লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে লাঠিপেটা করছেন পুলিশ এক সদস্য
সংঘর্ষের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে লাঠিপেটা করছেন পুলিশ এক সদস্য।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় শিল্পকলার ছাদ থেকে তাঁদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ইট-পাটকেলে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিপেটা শুরু করে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগ পরিচয়ে কিছু সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
রেজাউল কবির রেজা আরও বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর এই সন্ত্রাসীরা একাধিকবার আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেছে এবং শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।’
এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান বলেন, একটি গ্রুপ শিল্পকলা একাডেমির দ্বিতীয় তলা থেকে পুলিশের গাড়িতে ইট ছুড়ে মারে। এ ঘটনার পর পুলিশ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
নদীবন্দর থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী নদীবন্দরে যায়নি। আর উদ্ধার হওয়া দেশীয় অস্ত্র ছাত্রলীগের নয়।
অন্যদিকে সভাপতি পদবঞ্চিত জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সবুজ মোল্লা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি বা আমার সমর্থক কোনো ছাত্রলীগ কর্মী জড়িত নেই। আমি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। কী ঘটেছে আমি জানার চেষ্টা করছি।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন। এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকেই সদ্যঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা বেশ কিছুদিন বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর চালায়।
Discussion about this post