রাকিব হোসেন মিলন
সরকারি চাকরি থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ধনঞ্জয় কুমার দাস এখন দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা রেশম উন্নয়ন বোর্ডে পরিচালক পদে বদলির আদেশ পাওয়ার পরও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। বরং তিনি গা-ঢাকা দিয়ে শেষমেশ ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির সন্তান ধনঞ্জয় কুমার দাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র ছিলেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা ধনঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে। তবে তিনি আরও পরিচিত ছিলেন ইস্কনপন্থী সিন্ডিকেটের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য।
২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদে যোগ দেওয়ার পর তিনি সরকারি বদলি-বাণিজ্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়ে ওঠেন। এই সময়েই তাকে ‘মহারাজ’ নামে ডাকা শুরু করেন তার ব্যাচমেট ও সহকর্মীরা।
টানা পাঁচ বছর ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ধনঞ্জয় দেশব্যাপী পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির প্রধান কারিগর হিসেবে পরিচিতি পান। এই সময়েই তিনি কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও ভারতে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলেন। দেশে তার অবৈধ আয়ের সামান্য অংশই থেকে গেছে, বাকিটা বিদেশে পাচার করা হয়।
মালয়েশিয়ায় কাউন্সেলর থাকা অবস্থায়ও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। তার অপকর্মের তথ্য হাসিনা সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও উঠে আসে।
সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট থেকেই ঢাকায় অদৃশ্য হয়ে যান ধনঞ্জয়। তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উসকানি এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে। অভ্যুত্থানের পর ৩১ আগস্ট তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়, কিন্তু তিনি সেখানে যোগ না দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
ধনঞ্জয় কুমার দাসকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত ধনঞ্জয় তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের অভ্যন্তরে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।
ধনঞ্জয়ের দেশত্যাগের ঘটনা একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অভ্যুত্থানের পর একজন যুগ্ম সচিবের এভাবে পালিয়ে যাওয়ার নজির দেশের প্রশাসনে বিরল। বর্তমানে তিনি আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ভারতে অবস্থান করছেন বলে সূত্রের দাবি।
ধনঞ্জয় কুমার দাসের কাহিনি প্রমাণ করে কীভাবে প্রশাসনিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার একজন কর্মকর্তাকে নৈতিকতার বাইরে নিয়ে যেতে পারে। অভ্যুত্থানের পর তার এই আত্মগোপন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রশাসন এবং রাজনীতিতে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে। দেশবাসী এখন অপেক্ষায়—ধনঞ্জয়ের মতো কর্মকর্তাদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না।
Discussion about this post