রাকিব হোসেন মিলন
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা প্রায়শই দেখা যায়। কোনো একটি ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হলে সমগ্র বাহিনীকে দায়ী করা হয়, যা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, অথচ তাদের ত্যাগ ও অবদানের বিষয়টি প্রায়শই আড়ালে থেকে যায়।
পুলিশের অবদান নিয়ে বিতর্কের চেয়ে সঠিক মূল্যায়নই সময়ের দাবি বলে মনে করছি। এটা একেবারে স্পষ্ট যে বাংলাদেশ পুলিশের এমন হাজারো এচিভমেন্ট আছে যা গুনে শেষ করা যাবে না। মূলত পুলিশ একটি ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড। সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনাগুলোতে পুলিশের ভূমিকা আবার নতুন করে সামনে এসেছে। একদিকে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা—এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। এই প্রেক্ষাপটে সাধারন নাগরিক ও ছাত্রজনতা যেমন নিহত হয়েছেন তেমনি সংঘর্ষে অনেক পুলিশ সদস্যের ও জীবন চলে যায়। তাঁরা শুধু কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পুলিশ কেবল আইন প্রয়োগকারী নয়, বরং বিপদের মুহূর্তে আমাদের প্রধান ভরসা।
পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর ঘটনা শুধু তাদের পরিবার নয়, গোটা জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সরকারের উচিত যথাযথ সহায়তা প্রদান করা। কিন্তু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সব কিছুর বিষয়ে সরকার আন্তরিকতা দেখালেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। এটি স্পষ্ট বৈষম্য বলে মনে করছি। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ এর আন্দোলনে যে সকল পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন তাদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা দরকার। একইসাথে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত জরুরি। যে পুলিশ সদস্যরা আমাদের জন্য নিজেদের জীবন বাজি রাখেন, তাদের পরিবার যেন আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জনগণের বিপদে, বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সন্ত্রাসী হামলার মতো পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা জান-মাল রক্ষা করতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। কোনো গোষ্ঠী বা শক্তি যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে চায়, তবে তা আমাদের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। গনঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সংকটকালীন মুহূর্তে পুলিশের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি তারা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অবিচল রয়েছেন। তাই জনগণের পক্ষ থেকে পুলিশের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার ক্রাইম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশুদের সুরক্ষা এবং সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমে পুলিশের সফলতা প্রশংসনীয়। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন। অপরাধের ধরন যেমন বদলেছে, তেমনি পুলিশও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
তবে পুলিশের কাজে আরও স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জনগণের মনে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়, তা দূর করার জন্য পুলিশের উচিত জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা। জনগনের সাথে পুরোপুরি মিশে যাওয়ার এখনই উত্তম সময়। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মতো উদ্যোগগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে জনগণের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি পুলিশের কার্যক্রমও আরও ফলপ্রসূ হবে।
পুলিশ বাহিনীকে শুধু সমালোচনার চশমায় না দেখে তাদের অবদান এবং ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। পুলিশের প্রতি সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধের অংশ। যে কোনো বিপর্যয়ে তারা আমাদের পাশে থাকে; এবার আমাদের পালা তাদের পাশে দাঁড়ানোর। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য পুলিশের এই নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হলে প্রয়োজন যথাযথ সম্মান ও সহায়তা।
বাংলাদেশ পুলিশ সত্যিই সীমাহীন অবদান রেখে চলেছে। আমাদের উচিত সেই অবদানকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে তাদের কাজকে আরও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রাকিব হোসেন মিলন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: দিপা আক্তার
মোবাইলঃ 01634559838
মোবাইলঃ 01944701754
Email:mrheng1971@gmail.com
২০২২. সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ
Developer by: Md Tushar Emran