রাকিব হোসেন মিলন
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রোববার (০১ ডিসেম্বর) দেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র হস্তান্তর করবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরদিন সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আয়োজিত সংলাপটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এতে বাজেটের উন্মুক্ততা নিয়ে পরিচালিত জরিপের ফলও প্রকাশ করা হয়।দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ সময় বলেন, বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি ও লুন্ঠনের মাধ্যমে অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এই সরকার কেন এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেনি? যেসব লুণ্ঠনকারীর ব্যাংক ঋণ আছে, সেগুলো সমন্বয়ের জন্য তাদের সম্পত্তি কেন অধিগ্রহণ করা হলো না। দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পদ থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে নিতে না পারলে কিসের বিপ্লব হলো। এমন পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।আর্থিক খাতসহ নানা বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ থাকলেও উদ্বেগ কাটছে না।
এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আর্থিক খাত সংস্কারে এই সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তারপরও মানুষের উদ্বেগ কাটছে না। সরকারের নেওয়া উদ্যোগের ফলগুলো হয়তো এখনই আসছে না। আর মানুষ ধৈর্য রাখতে পারছে না বা আস্থার সংকট হচ্ছে।এর আগে আওয়ামী সরকারের আমলে ইআরএফের এক অনুষ্ঠানে এই অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’।
এই উদ্ধৃতি গতকাল আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী রোববার বলতে পারব কোন কোন ডাল পচা, আর কোন কোন ডাল ভালো ছিল। এদিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হবে। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে গত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হবে।দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই দুই খাতে বেশি লুটপাট হয়েছে। এসবই তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণার চেয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল। এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোনো সরকার উত্তারাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে সেই সরকারের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। ব্যাংক খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তা দূর করার চেষ্টা চলছে।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, আওয়ামী সরকার পতনে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় সরকার দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হলে মানুষকে ততটাই হতাশ করা হবে। এ জন্য বছর শেষে সরকারকে ৫ মাসের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে হবে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী জানুয়ারিতে উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন ফোরাম গঠনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অনিশ্চয়তা দূর হবে।অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অনেক বেপরোয়া নীতি নিয়েছিল। তার খেসারত আমরা গুনছি। তিনি বলেন, এখন ব্যাংক থেকে লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রপ্তানি বেড়েছে। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ আগামী ছয় মাস কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।জরিপের ফল তুলে ধরেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ৩৭ শতাংশ, যা যথেষ্ট নয়।
এ ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ, এগিয়ে কেবল পাকিস্তানের তুলনায়। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ আর বাজেট বাস্তবায়নে তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এটা ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা করা হবে। জরিপে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে, তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, এখন প্রত্যাশা সবার বেশি। রাতারাতি মূল্যস্ফীতি কমে যাবে না। এ জন্য সময় লাগবে। তবে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে আস্থার সংকট আছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
শুরুতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। আর আস্থা সংকটের আরেকটি কারণ আইনশৃঙ্খলার ঘাটতি। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
Discussion about this post