লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির মেঘনার তীরে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলছিলেন মোঃ কালাম। নদীর গ্রাসে সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষটি বললেন, “একসময় আমাদের নিজের জমি ছিল, ঘর ছিল। এখন আর কিছু নেই। নদী আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানো তো দূরের কথা, তাদের দু’বেলা খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে গেছে।”
কালামের মতো হাজারো মানুষ আজ নদী ভাঙনের শিকার। ভাঙনের কারণে বসতভিটা হারানো এসব মানুষের জন্য জীবন যেন এক অনির্দিষ্ট যাত্রা। অনেকে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ কেউ আবার নতুনভাবে নদীর পাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কুঁড়েঘর তুলে বসবাস করছে।
সুফিয়া বেগমের পরিবারের ছিল ৫ বিঘা জমি। কিন্তু তিন বছর আগে মেঘনার করাল গ্রাসে আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় জমির সঙ্গে তাদের একমাত্র পাকা ঘরটিও নদীতে তলিয়ে যায়। তিনি বলেন “সব হারানোর পর ঢাকায় বাসা-বাড়িতে কাজ করি। ২ দিনের ছুটি পেয়ে এলাকার মানুষজনকে একনজর দেখতে আসছি। আর্থিক সমস্যায় আমার ছেলে-মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারে না। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
লক্ষ্মীপুর জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, “নদী ভাঙন একটি জটিল প্রাকৃতিক সমস্যা। সরকার নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অনেক জায়গায় বাঁধ নির্মাণ ও তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে। সাম্প্রতিক কাজগুলো চলমান করতে আমাদের প্রচেষ্টা চলছে।"
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। অনেকে মনে করেন, নদী ভাঙন রোধে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিবছর বর্ষার সময় আমাদের ভয় হয়, কখন আবার বাড়ি-ঘর নদীতে তলিয়ে যায়। কাজ দ্রুত শেষ না হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কার্যকর তদারকির কোনো বিকল্প নেই।
নদী ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য নতুন জমি বরাদ্দ ও ঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মানসিক সাপোর্ট ও বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করা উচিত।
কালাম কিংবা সুফিয়ার মতো মানুষদের চোখে এখনো একটাই প্রশ্ন: “আমাদের আর কবে শান্তি ফিরবে?” সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়নই পারে এই প্রশ্নের সমাধান দিতে।
নদী ভাঙন শুধু প্রকৃতির নির্মমতা নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন টেকসই উদ্যোগ ও সমবেদনার হাত। তবেই হয়তো ভাঙনের শিকার মানুষগুলো নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রাকিব হোসেন মিলন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: দিপা আক্তার
মোবাইলঃ 01634559838
মোবাইলঃ 01944701754
Email:mrheng1971@gmail.com
২০২২. সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ
Developer by: Md Tushar Emran