রাকিব হোসেন মিলন
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিন দিন এমনভাবে বেড়ে চলেছে যে, তা স্বাভাবিক জীবনযাপনে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম, ওষুধ এবং জ্বালানির মতো অপরিহার্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে সামান্য বৈচিত্র্য থাকত, তা এখন একরকম বিলুপ্তির পথে। বাজারে গেলে ক্রেতাদের দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। এক কেজি চাল কেনার আগে তিনবার ভাবতে হচ্ছে, ডাল কিংবা তেলের কথা তো বাদই দিলাম। পরিবারের বাবা মায়েরা সকলকে নিয়ে একবেলা পেট ভরে খেতে পারবেন কি না, সেই চিন্তায় অস্থির থাকতে হয়।
যেখানে সামান্য আয়ের মানুষগুলো দিন আনে দিন খায়, সেখানে দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি তাদের জীবনে এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে। দিনমজুর, রিকশাচালক, কারখানার শ্রমিকসহ নানান খেটে খাওয়া মানুষকে প্রতিদিনই বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা এখন বিলাসিতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই অবস্থার জন্য বহুমুখী কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত, মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকট এর মধ্যে অন্যতম। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বাজারে সিন্ডিকেটের আধিপত্য। ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়ে নিজেদের মুনাফা নিশ্চিত করছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে দায়মুক্তি দেয়া যায় না। বাজার মনিটরিংয়ে যে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা দৃশ্যমান নয়। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বরাবরই যে ধরনের শক্তিশালী ভূমিকা আশা করা হয়, তা অনুপস্থিত।
তবে আশার কথা, সরকার ইতোমধ্যে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এই পদক্ষেপ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একইসঙ্গে, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
একইসঙ্গে, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্যের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া, সরকারের উচিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আরও বিস্তৃত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা। ভর্তুকি বাড়িয়ে, রেশনিং পদ্ধতি কার্যকর করে তাদের ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে না পারলে দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। নিম্ন আয়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সমাজের সকলের। আমরা আশা করি, এই সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
Discussion about this post