আন্তর্জাতিক ডেস্ক
“বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ সরাসরি এসে ভিড়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের ওই জাহাজটি গত ১৩ই নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভিড়েছিলো।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্য খালাস হয়ে গেলে পরদিনই জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করেছে।
জানা গেছে, ‘দুবাই টু চট্টগ্রাম’ রুট ধরে আসা জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়া। নতুন এই সার্ভিসটি চালু করেছে দুবাই ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন হল, এত বছর পর বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে কন্টেইনারবাহী জাহাজ কেন এল? কেন-ই বা এটি এত তাৎপর্যপূর্ণ? ওই কন্টেইনারগুলোতে কী আনা হয়েছে, তা নিয়েও মানুষের কৌতুহল কম না।
পাকিস্তান বাংলাদেশের বাণিজ্য
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বহু বছর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য হতো না।
পরবর্তীতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপিত হলেও পাকিস্তান থেকে সাধারণত সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসতো না। সেদেশের পণ্যবাহী জাহাজ প্রথমে শ্রীলঙ্কায় কন্টেইনার খালাস করতো। এরপর জাহাজ বদল করে সেসব কন্টেইনার বাংলাদেশে আসতো।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দুই দেশের মাঝে শীতল সম্পর্ক ছিল।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। তখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য “লাল তালিকাযুক্ত” করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর লাল তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে দেশটির সব ধরনের পণ্য।
শুরু এক্ষেত্রেই না, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও অনেক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে অধ্যাপক ইউনুস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মধ্যে বৈঠকের ঘোষণায়ও উল্লেখ করা হয় যে দুই দেশই বিভিন্ন স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।
এসবের মাঝে নতুন করে এই জাহাজ ভেড়ানোর খবর দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশে পাকিস্তান হাই কমিশনও গত বুধবার তাদের ভেরিফায়েড এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে এটিকে “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
ওই টুইটে তারা বলেছে, এই “নতুন রুট সরবরাহ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মাঝে আনবে, ট্রানজিট সময় কমিয়ে দেবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ খুলে দিবে।
যদিও সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে’ আসা বলে ব্যাপক আলোচনা হলেও, আসলে জাহাজটি দুবাই থেকে ইন্দোনেশিয়া যাবার পথে করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার লোড বা আনলোড করেছে।
Discussion about this post