রাকিব হোসেন মিলন
বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশের জনগণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি, ওষুধসহ বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এই সংকট শুধু পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নয়, পুরো অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ, এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের অসামঞ্জস্য। কিন্তু এসব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং শিল্পখাতও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
সরকারের উচিত দ্রব্য মূল্যের নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রথমত, বাজারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করে পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, টেকসই কৃষি এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করে নির্ভরশীলতা কমানো যেতে পারে। এছাড়া, জনগণের জন্য বিশেষ ভর্তুকি কার্যক্রম চালু রাখা উচিত, যা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য সহায়ক হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সমাজে অস্থিরতা, চুরি-ডাকাতি ও সামাজিক অপরাধের হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্তই প্রয়োজন। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি বলে মনে করছি।
সর্বশেষ বাজারের পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর বলা চলে। পকেট ভর্তি টাকা বাজারে নিয়ে গেলেও কাংখিত সদাই কেনা যাচ্ছে না। তার অন্যতম দ্রব্যের মূল্য সীমাহীন ও একই মূল্যস্ফীতি লাগামহীন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুখোড় নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হলেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। কিন্তু একজন স্বৈরশাসকের বিদায়ই সব কিছুর সমাধান নয়। মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরে এসেছে সত্যি কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পেটপুরে খাবার খাওয়া। প্রান্তিক বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায়ই দৃশ্য ধরা পড়ে, যেখানে এটা পরিষ্কার বলা যায় যে মানুষ আসলে খাবার সংকটে রয়েছে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারও নিয়মিতভাবে তার পরিবার পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দায়ভার কে নেবে? যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের মৌলিক পাঁচটি চাহিদা পূরণ করা। সেখানে আমরা এখন ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাচ্ছি। বলা হচ্ছে, বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে যে বাক স্বাধীনতা আমরা ফিরে পেলাম সেখানে নতুন করে যুক্ত করার সময় এসেছে দেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে এই ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যে নিশ্চয়তা প্রদান করা। তাহলেই আমরা প্রকৃত অর্থে ভালোভাবে এগিয়ে যাবো। এগিয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ।
Discussion about this post