রাকিব হোসেন মিলন
সিনিয়র রিপোর্টার
৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলার ভয়ে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন। আত্নগোপনে রয়েছেন অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।
দেড় মাসেরও বেশি সময় পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসায় তাদের কেউ কেউ এখন নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।
তবে বাড়ি ফেরার জন্য তাদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছেন না, তাদেরকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমনকি কোন কোন জায়গায় তারা হামলার শিকারও হয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
টাকা দিয়ে সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছেন বা ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে- আওয়ামী লীগের তৃণমূলের এমন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীরা এ অভিযোগ করেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের কেউই নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি, এমনকি এলাকার নামও উল্লেখ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে এলাকায় ফিরতে কাকে কত টাকা দিতে হয়েছে এবং ফেরার পর কী অবস্থায় দিন পার করছেন, সেই অভিজ্ঞতা তারা সাংবাদিকদের কে গোপনে জানিয়েছেন।
“ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। সারাদিন ঘরেই থাকতে হচ্ছে,” এমন কথা বলছিলেন তৃণমূলের এক আওয়ামী লীগ নেতা।
হামলার হাত থেকে বাঁচতে বিএনপিসহ এলাকার প্রভাবশালীদেরকে টাকা দিতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাড়িঘরে ফেরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতারা অবশ্য অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বেশিরভাগ নেতা এখনও ‘আত্মগোপন’ রয়েছেন।
এর মধ্যে অনেকে দেশ ছেড়েছেন, ‘দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে’ কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
অবস্থায় নেতৃত্ব সংকটে বিপর্যস্ত দলটিকে ঘিরে নানান গুজব ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রায় মাসখানেক সাড়া-শব্দহীন থাকার পর দলটিকে সম্প্রতি বিবৃতি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
তবে বিবৃতিটি দেশের ভেতর থেকে নাকি বাইরে থেকে দেওয়া হচ্ছে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘরছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
গত ৫ আগস্টের পর যেভাবে তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা হতে দেখা যাচ্ছিলো, সেটিও এখন দেখা যাচ্ছে না।
ফলে এখন পরিবারের কাছে ফিরতে চাচ্ছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কিন্তু হঠাৎ এলাকায় ফিরলে যে হামলার শিকার হতে পারেন, সেই ভয়ও কাজ করছে তাদের মধ্যে।
সেজন্য এলাকায় এখন যারা প্রভাবশালী, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।
“এটা ছাড়া তো উপায় নাই। বউ-বাচ্চা ফেলে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবো,” এমন কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতা।
বেশিরভাগ এলাকায় বিএনপি এখন নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় দলটির নেতাদের সঙ্গেই মূলত যোগাযোগ করছেন বলে ‘আত্মগোপনে’ থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এলাকায় ফিরতে তাদেরকে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
চেয়েছিল তিন লাখ, পরে অনেক বলে-কয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে ফিরছি,” বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার ওই নেতা।
তিনি বলেন “বড় কোনো নেতা নয়। আমাদের মতো ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাই এই টাকা গুলো নিয়ে থাকেন,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা।
গত পাঁচই আগস্টের কয়েক সপ্তাহ পরেই যোগাযোগ শুরু করেছিলেন বলে জানাচ্ছেন তিনি।
এসব তথ্য জানালেও বিএনপির তৃণমূলের যে নেতা টাকা নিয়েছেন, তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি এলাকায় ফেরা আওয়ামী লীগ নেতা।
“কারন এটা জানাজানি হলে আরও ডিস্টার্ব করবে, বোঝেনই তো। তখন পরিবার নিয়ে এলাকায় থাকতে পারবো না,” বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
Discussion about this post