রাকিব হোসেন মিলন
আমরা জানি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট চলে আসছে বহুকাল ধরে। মূলত এটির সূত্রপাত হচ্ছে অনেক বছর ধরে চলে আসা জাতিগত, ধর্মীয়, এবং রাজনৈতিক সমস্যার ফলাফল। ছোট্ট করে যদি বলি এই সংকটের মূল কারণগুলো নিম্নরূপ:
১.ঔপনিবেশিক যুগের বৈষম্য:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশরা তাদেরকে প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ করেছিল। এতে করে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বৌদ্ধদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে আরও বাড়তে থাকে।
২.নাগরিকত্ব সংকট:
১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্ব আইন পাশ করে, যেখানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের মূল জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে, রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
৩.ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য:
মিয়ানমারে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রোহিঙ্গা মুসলিমরা একটি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী। এই ধর্মীয় পার্থক্য এবং জাতিগত বৈষম্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
৪.রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা:
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতার লড়াই, রোহিঙ্গা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত সামরিক অভিযানে রোহিঙ্গারা ব্যাপক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা শিকার হয়েছে।
৫.২০১২ এবং ২০১৭ সালের সহিংসতা:
২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়, যা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানচ্যুত করে। এরপর ২০১৭ সালে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA) মিয়ানমার পুলিশ চৌকিতে হামলা চালালে সেনাবাহিনী বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রাম ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এই সব ছোট- বড় কারণ মিলেই রোহিঙ্গা সংকটের মূল শিকড় গড়ে ওঠে। বাস্তবতা হলো আজও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যু একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
Discussion about this post