রাকিব হোসেন মিলন
গরমের তীব্রতা কমার লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। এ যেনো তীব্র মানবিক বিপর্যয়। সব বয়সের মানুষই এখন তীব্র তাপদাহের শিকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার তীব্র গরম পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। তাপদাহের কারণে শিশুদের অবস্থা অনেকটাই বিপর্যস্ত বলা যায়। অনেকের অবস্থা প্রায় ওষ্ঠাগত। ফলস্বরুপ উদ্বিগ্নতা বাড়ছে মাতা-পিতার। এছাড়াও তীব্র গরমের কারণে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা, চেতনা হ্রাস প্রভৃতির মতো উপসর্গ।
লোকজন তীব্র গরমে সাময়িকভাবে স্বস্তি পেতে পান করছে কোমল পানীয়, স্যালাইন, শরবত এবং রং মিশ্রিত বিভিন্ন প্রকার ভেজাল পণ্য। ফলস্বরুপ মানুষজন শারীরিকভাবে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে শিশুদের মাঝে দেখা দিচ্ছে প্রকট মানসিক সমস্যার। লক্ষ্মণীয় বিষয় হলো, তীব্র গরম যে শুধু বাংলাদেশে এই রকমটা নয়, অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক শিল্পায়ন যুগ থেকে ১ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়ে গেছে। যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। এতে করে সমুদ্রের নিকটবর্তী এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দেখা দিচ্ছে অসময়ে বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, নদী ভাঙন প্রভৃতি সমস্যা। বিজ্ঞানীদের মতে চরম গরমের অন্যতম কারণ হচ্ছে: ১. দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ২. নির্বিচারে বন নিধন ৩.বৃক্ষ কেটে অপরিকল্পিত নগরায়ন ৪. শিল্প কারখানায় অধিক পরিমাণে গ্রীন হাউস গ্যাস যেমন মিথেন, সালফার কার্বন ডাই অক্সাইড, ওজোন এবং নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি নিঃসরণ ৫. এল নিনের ভয়ংকর প্রভাব ৬. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা ৭. পৃথিবী এবং সূর্যের ঘূর্ণনের দিক পরিবর্তন ৭. বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা দ্বিতীয় স্তরের ক্ষতিগ্রস্ত ইত্যাদি।
বলাবাহুল্য বিশ্বে যদি এ রকম অবস্থা চলতে থাকে ভবিষ্যতে মানব বসতি হুমকির সম্মুখীন হবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো মিথেনের তাপ ধারণ ক্ষমতা ২৫ গুণ। যা পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। অতএব আমাদের সবাইকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে, গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয় এমন পণ্যের ব্যবহার এবং বৃক্ষ কেটে নগরায়ন বন্ধ করতে হবে। দেশজুড়ে সবুজ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে মানবকল্যাণে ব্যবহারের উচ্চতর গবেষণা করতে হবে। বন কেটে শিল্পায়ন এবং বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে হবে। সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি এবং জল শক্তির যথার্থ ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানি চালিত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে বৈদ্যুতিক এবং ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহী হতে হবে। সর্বশেষ একে-অপরকে বৃক্ষ রোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আসুন পৃথিবীকে বাঁচাই। প্রিয় বাংলাদেশ কে বাঁচতে দেই। ঐক্যবদ্ধ সচেতনতাই পারে আমাদের কে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার কাজে মনোযোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাতে। সৃষ্টি কর্তা আমাদের প্রতি রহম করুন।
Discussion about this post