রাকিব হোসেন মিলন
বিশেষ প্রতিনিধি।
চট্টগ্রামে খাল খননের সময় হেলে পড়া ভবন পরিদর্শনে গিয়ে ওই ভবনসহ আশপাশের ৩০টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া এই ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসনের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায়।
কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আগে, দুপুর ১২টার পর পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর সরাইপাড়া এলাকায় গয়নার ছড়া খালসংলগ্ন তিনতলাবিশিষ্ট একটি ভবন হেলে পড়ে বলে খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস।
উমর ফারুক বলেন, হেলে পড়া ভবনটির পেছনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খনন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে। সেই খাল খনন করার সময় ভবনের পিলার দুর্বল হয়ে পড়েছে মর্মে বাসিন্দারা দাবি করেছেন। পাশাপাশি সেমি পাকা দুটি ঘর ভেঙে গেছে দেখা যায়।
এই ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিতে সিএমপির প্রতিনিধি, সিটি
সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, সিডিএর প্রতিনিধি, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, গনফুর্ত প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার জামিউল হিকমা সজীব ও সিএমপি কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরের বিভিন্ন খাল খনন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীন মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ভবনটির যে ফাউন্ডেশন রয়েছে তার কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ভবনটি হেলে পড়েছে বলা হলেও এই রকম কিছু নয়। মূল বিষয়টি হচ্ছে উনাদের ভবনের লাগোয়া যে সীমানা দেয়াল তোলা হয়েছিল, সেটা কোনো ফাউন্ডেশন ছাড়াই মাটির ওপর আলগা করে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে তোলা হয়েছিল। সাধারণত এই ধরনের দেয়াল করতে হলে গ্রেটবিম দিয়ে করতে হয়। এতে খালে শিট পাইলিং (স্টিলের পাত বসানো) করার সময় পাশে থাকা ওই সীমানা দেয়ালে ফাটল ধরে ওই অংশের কিছু মাটি নিচে দেবে গেছে। দেয়ালের কিছু অংশও ধসে পড়ে। ভবনের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় তাতে অনেকেই মনে করেছিল ভবনটি হেলে পড়েছে।
ঘটনার বিষয়ে কেউ একজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিসকে আসতে দেখে সেখানে থাকা লোকজন ভবনটি হেলে পড়েছে বলে খবরটি আরও ছড়িয়ে দেয়। আসলে ভবনটি হেলে পড়েনি বলে জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ভবনের ভিত সবই ঠিক আছে। কোথাও কোনো ফাটল পাওয়া যায়নি। খাল থেকে ভবনটি নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে। এতে কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামে নালা খননের সময় হেলে পড়ল আরও একটি ভবনচট্টগ্রামে নালা খননের সময় হেলে পড়ল আরও একটি ভবন
এর আগে, পরিদর্শনে যাওয়া আগ্রাবাদ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, নালা খনন কাজের সময় ভবনটি সামান্য হেলে পড়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনটির একটি অংশের মাটি সামান্য সরে গেছে। এতে আনুমানিক দেড়–দুই ইঞ্চি হেলে পড়তে পারে। তবে এটা প্রাথমিক ধারণা।
এ ছাড়া ভবনের পাশে আলগা করে তোলা সীমানা দেয়ালের একটি অংশ ধসে পড়েছে। কিন্তু ভবনটির অবকাঠামোর সব ঠিক আছে। ভবনে ফাটল কিংবা কোথাও ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখিনি। ভবনটি অত ঝুঁকিপূর্ণও নয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।
Discussion about this post