দোহার ও নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
বৃষ্টি, শ্রমিক-সংকটে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় ধান কাটতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষক। এ ছাড়া পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় তা কাটতে মজুরি বেশি চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষক নিজেই পানিতে নেমে কাটছেন ধান। সেই কাটা ধান ঘরে তুলতে কৃষকের এখন ভরসা নৌকা।
জানা গেছে, উপজেলার চালনাইচক, বাহ্রাচক, চুড়াইনচক, বারুয়াখালীচক, টিকরপুরচক, আড়িয়ল বিল, কাঠালীঘাটারচক এলাকায় এবার বোরো ও আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বাম্পার ফলনের লাভ ওঠানো নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা। ফলে অনেকে আধা পাকা ও তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়িয়ল বিলে ও কাঠালীঘাটারচকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটছেন নানা পেশার মানুষ। শ্রমিক-সংকটের কারণে তাঁরা পরিচিতদের ধান কাটায় সহযোগিতা করছেন, আবার অনেকে বেশি টাকার আশায় কোমরপানিতে কৃষককে ধান কেটে দিচ্ছেন।
আড়িয়ল বিলের কৃষক মো. হাসান বলেন, ‘বৃষ্টি ও পানি বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানি জমে ধান পচে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পরিবারের লোকজন নিয়েই কোমরপানিতে নেমে ধান কেটে নৌকা দিয়ে উঁচু জায়গায় নিতে হচ্ছে। এতে কষ্ট হচ্ছে।’
কাঁঠালিঘাটারচকের মো. লোকমান বলেন, ‘রংপুর, বরিশাল, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের এখানে লোক এসে ধান কাটেন। এবার শ্রমিক-সংকট ও বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা ধান কাটছি। আর আমি পেশায় রাজমিস্ত্রি। সেই কাজের চেয়ে ধান কাটার মজুরি বেশি পাচ্ছি। তা ছাড়া আমরা এলাকার মানুষ; পরিচিতদের ধান পানিতে তলিয়ে বিপদে পড়েছেন দেখেই এ কাজ করছি।’
বাহ্রা এলাকার কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘এবার ১০ পাখি ধান রোপণ করেছি। কিছু ধান কেটেছি আর কিছু আছে। এবার বৃষ্টি ও শ্রমিক-সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছি না, ধান পেকে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর রংপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনার মানুষ দিয়ে ধান কাটি। এবার দুই জেলায় একসঙ্গে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এতে একদিকে যেমন শ্রমিক-সংকট, তেমনি মজুরি বেশি।’
চূড়াইনে ধান ভাগ করতে আসা কৃষক মো. সেলিম বলেন, ‘আমি পেশায় কৃষক। প্রতিবছর ১০-১৫ বিঘা ধান রোপণ করি। এবারও করেছি। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেদেরই ধান কাটতে হচ্ছে। ধানও পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে কোমরপানিতে নেমে ধান কেটে নৌকায় করে বাড়িতে আনতে হচ্ছে।’
এই কৃষক অভিযোগ করেন, রংপুরের এক কৃষককে ৫ হাজার টাকায় ধান কাটার কাজ দেন। ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় না কেটে কৃষিশ্রমিক চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে জমির মালিককে ধান কেটে নিতে হবে।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান জানান, এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৯৭০ হেক্টর।
কিছু ধান কাটা হয়েছে। বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। ক্ষতি হলে তা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব বলেন, ‘এবার দোহারে ৪ হাজার ৩২০ হেক্টরে ধানের আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে দোহারে ২০ শতাংশ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এখনো জমিতে ধান কাটা বাকি ২৫-৩০ শতাংশ।
Discussion about this post