বিশেষ প্রতিনিধি।
“পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার নিঃস্বার্থ সেবাই আমাদের অঙ্গীকার” এই স্লোগানের সাথে বাস্তবতা খুব কমই খুঁজে পান পাসপোর্ট গ্রাহকরা। কর্তৃপক্ষ হয়রানি ও ভোগান্তিমুক্ত পরিবেশে পাসপোর্ট সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও দালালদের দৌরাত্ম্য ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে জটিলতা রয়ে গেছে পদে পদে। করোনাকালীন মহামারীর দুঃসময়েও থেমে ছিলোনা লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি।
অনুসন্ধান ও সরেজমিনে বিভিন্ন সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দালাল ছাড়া কোনভাবেই ব্যক্তি উদ্যোগে পাসপোর্ট করা যায় না। অসম্পূর্ণ তথ্য, ফরম কাটাছেঁড়া, হাতের লেখা ভালো না সহ নানা খুঁত দেখিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে আসা পাসপোর্ট গ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে হয়রানি হচ্ছে পাসপোর্ট কাঙ্খীরা। বৈদেশিক রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পাসপোর্ট রিনিউতেও পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। দিনের-পর-দিন ধর্ণা দিয়েও কাজ হচ্ছে না এইসব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস লক্ষ্মীপুরের নৈশ প্রহরী থেকে আনসার পর্যন্ত পাসপোর্ট দালালীতে সক্রিয়।
জানা গেছে উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম নিজেই টাকা ছাড়া আবেদন ফরম সাক্ষর করেন না। যেসব দালালের কাছ থেকে এই কর্মকর্তা উপঢৌকন গ্রহণ করেন, সেসব দালালের মাধ্যমে আসা আবেদন ফরমে গোপন সংকেত দেয়া থাকে। সেগুলোতে তিনি নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করেন।
পাসপোর্ট অফিসার উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এর কাছে কোন গ্রহাক সহযোগিতা চাইলেও করা হয় না উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয় এমন অভিযোগ করে প্রবাস ফেরত মোবারক হোসেন জানান, দালাল অতিরিক্ত টাকা চাওয়ায়, আমি অফিসের সহযোগিতা চেয়েছি কিন্তু অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, একবারে কাজ ৫/৬ বার করিয়েছে আমাকে দিয়ে।
দালাল বেষ্টিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস লক্ষ্মীপুর। উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম যেসব দালালের আবেদন ফরম নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করেন তারা হলেন- পাসপোর্ট অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবুল, আনসার সদস্যদের মধ্যে পি সি জসিম ও সাইফুল। রায়পুরের দালালদের মধ্যে হিমাংশু, সোহেল, কালা অহিদ। রামগঞ্জের দালালদের মধ্যে সাইফুল, রাব্বানী, বিল্লাল, মোহাম্মদ। কমলনগরের দালাল অনিমেষ ও আজাদ। চন্দ্রগঞ্জের দালাল ফয়েজ। মান্দারীর দালাল হারুন। দিঘলির দালাল আনোয়ার। লক্ষ্মীপুর সদরের ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের গৌতম, দালাল কাশেম, আরিফ, আবদুল খালেক।
এরা বিভিন্ন স্থান থেকে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সংগ্রহ করে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে দুইগুণ থেকে তিনগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়। পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা ঝামেলামুক্ত নির্দ্বিধায় সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল বলেন, আমরা বিভিন্ন রেটে পাসপোর্ট করি। এতে নির্ধারিত ফি’র বাহিরেও টাকা নিতে হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৯ হাজার, ১০ হাজার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিই। গ্রাহক দ্রুত চাইলে আমরাও খরচ সেভাবে নিই।
পাসপোর্ট প্রত্যাশী মহাদেবপুর থেকে আসা মো. শাহীন বলেন, ৯ মাস আগে আমি পাসপোর্ট আবেদন জমা দিয়েছি এখনো পাইনি। এর মাঝে বহুবার অফিসে গেছি, কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
আরেক পাসপোর্ট প্রত্যাশী সিএনজি চালক আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের জন্য ১৫ হাজার টাকায় আনসার সাইফুল ইসলামকে দিয়ে পাসপোর্ট করেছি এই করোনার ভেতরে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস লক্ষ্মীপুরের উপসহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ও আমার অফিস দালালমুক্ত, আমার অফিসে দালালের প্রবেশ কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ। তিনি আরো বলেন, অফিসে কোন টাকা পয়সা লেনদেন হয় না। এটা আমি বিলবোর্ড আকারে তৈরি করে ঝুলিয়ে রেখেছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।তাদের দাবী অচিরেই তারা জেলা পাসপোর্ট অফিসের এই অপকর্ম,অনিয়ম, দূর্নীতি ও হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়।
Discussion about this post