রাকিব হোসেন মিলন।
পারিবারিক কলহে বাড়ছে আত্মহত্যা
লক্ষ্মীপুরে যৌতুক, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কলহে আত্মহত্যা বাড়ছে। জেলায় গত ৫ বছরে ৩৪৫ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবছর গড়ে ৭০ জন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে লক্ষ্মীপুরে আত্মহত্যা করেছেন ৩৯ জন। আর গত এক বছরে আত্মহত্যা করেন ৭৪ নারী ও পুরুষ। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০। ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৬০ জনে। আর গত পাঁচ বছরে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন শতাধিক।
আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী। তাঁদের অনেকের মৃত্যুর পেছনে অন্যের প্ররোচনার অভিযোগও আছে। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছেন অপরাধীরা। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পরামর্শ সেবা দান, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার গুরুত্ব দিয়েছে পুলিশ।
আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসেবে পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাকে দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানী ও নারী নেত্রীরা। তাঁরা বলছেন, যৌতুক, সম্পর্কের জটিলতাসহ পারিবারিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক সংকট ও দ্রুত নগরায়ণ তৈরি করছে ব্যক্তির মানসিক সমস্যা; যা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করছে।
জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা জোবেদা খানম বলেন, মানসিক, পারিবারিক, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ইভ টিজিং, সিদ্ধান্তহীনতাসহ বিভিন্ন অপরাধ সইতে না পারার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইতিমধ্যে এ প্রবণতা কমাতে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিভিন্ন স্থানে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। ২০২০ সালে ৫০ এবং ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ জনে।
শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধ, মূল্যবোধের অভাব দূর, পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করা, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে কমে আসবে আত্মহত্যা। তা ছাড়া রাষ্ট্রকে সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।
জেলা সিভিল সার্জন আহাম্মদ কবির বলেন, নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন, সমাজে শিক্ষা বৃদ্ধি এবং সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন করার মধ্য দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে। অন্যথায় এটা বাড়তে থাকবে। এসব বিষয়ে কাউন্সেলিং ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে কেবল আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন ডা. আহম্মদ কবির।
অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ ব্যাপারী বলেন, লক্ষ্মীপুরে যেভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে, এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আত্মহত্যার ইন্ধন ও প্ররোচনা দানকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রতা, আইনি জটিলতা ও সঠিক সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় দিন দিনই বেড়েই যাচ্ছে আত্মহত্যা। দ্রুত এসব মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি।
পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। যৌতুক, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতন হলেই কেবল আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। ইতিমধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো, আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতন হলেই কেবল আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। তাই সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে সচেতন করতে এলাকায় জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
Discussion about this post