পুলিশের কাছে গেলে ন্যায়বিচার পাবে—মানুষের এই আত্মবিশ্বাসটা সব সময় যেন থাকে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুলিশ জনগণের সেবক হবে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। পুলিশের কাছে গেলে ন্যায়বিচার পাবে বা একটা ন্যায্যতা পাবে—এই আত্মবিশ্বাসটা যেন মানুষের মাঝে সব সময় থাকে। পুলিশকে সেই সেবাই দিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো বাহিনী ও ব্যক্তির জীবনে সফলতা তখনই আসে, যখন তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসাটা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে পুলিশ যাতে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে, এটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমাজটাকে উন্নত করতে চাই। পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, তৃণমূল পর্যায়ে পড়ে থাকে বা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করে, শত নির্যাতনের মুখেও প্রতিকার চাইতে পারে না, সেই মানুষগুলোর মাঝে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, নাগরিক অধিকার রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করা এবং তাদের সহযোগিতা করা।’
সেবাপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারের উন্নয়নের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে উন্নয়নটা তৃণমূল থেকেই শুরু করেছি। শুধু রাজধানী কিংবা শহরভিত্তিক না, সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়াটা পায়, সেটা লক্ষ রেখে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে বলেছিলাম, কোনো কুঁড়েঘর থাকবে না, আমরা একটা টিনের ঘর হলেও দেব। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সেমিপাকা ঘর দিচ্ছি এবং উন্নতমানের জীবনযাপন যেন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যার শুভ ফল সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়নটা গতিশীল হবে। মানুষের যখন থাকার জায়গা হয়, তখন সেটাই তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়। সেটা তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়াবার, আত্মকর্মসংস্থানের।’
পুলিশকে প্রযুক্তিগতভাবে যুগোপযোগী করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে যাচ্ছে। কাজেই এখন যোগাযোগের সুযোগ অনেক বেশি। তাই যেকোনো জায়গায় বসে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা জানা বা কোনো নির্যাতন করলে তার প্রতিকার করার সুযোগ আছে।’
পুলিশের ৯৯৯ সেবার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনো দুর্গত এলাকায় কেউ পথ হারিয়ে ফেললে, তাকেও পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। করোনাকালীন পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তা সমুন্নত করে মানুষের সেবা দেওয়াটাই দায়িত্ব।’
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের হেল্প ডেস্কে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের শুধু দেশে না, বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেব। তাঁরা যেন বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারেন। কারণ কোন দেশে কীভাবে এটাতে মানবিক দিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে, সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাই এখানে কাউকে বিদেশে পাঠিয়েও যদি ট্রেনিং করিয়ে আনতে হয়, সেটা করাব এবং তাঁরা অন্যদের ট্রেনিং করাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রশিক্ষিত একটা বাহিনী, যে বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে, মানুষের কল্যাণে কাজ করবে, সেটাই আমরা চাই। সেইভাবে আমরা গড়ে তুলব।’
এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি হেল্প ডেস্ক নির্মাণের মাধ্যমে নারী, বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সেবাদান এবং গৃহহীনদের গৃহ দেওয়া—এটা জনগণের পুলিশেরই কাজ। আজকের পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে।’
বাংলা নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের পাশে থাকবেন। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ-সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তুলছি। এর মাধ্যমে সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
Discussion about this post