আজ (১৮ মার্চ) বিশ্ব ঘুম দিবস। সুস্থ থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ঘুম যেমন জরুরি। তেমনি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্করা সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়তে পারেন। সেটি দিনে বা রাতের যেকোনো সময়ে হতে পারে।
কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো—এরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের প্যাটার্ন ও অভ্যাস পরিবর্তন হয়। ফলে মা বা যিনি শিশুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্বে থাকেন, তাঁর নিজেকেও সে অনুযায়ী প্রস্তুত করতে হয়, অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হয়। আপনার সোনামণির প্রথম বছরের রাতের রুটিনের সঙ্গে নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিচের গাইডলাইনটি অনুসরণ করতে পারেন।
নবজাতকের ঘুমানোর অভ্যাস
নবজাতক এই সময়টাতে দিন এবং রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝে না। ২৪ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময়ই সে বেঘোরে ঘুমায়। যেহেতু ঘুম তাদের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সুতরাং দিনরাত তার ঘুমের রুটিনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন। তার ঘুম ও বিশ্রামের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া নিশ্চিত করুন।
কিছু শিশু আবার শরীরে মৃদু চেপে থাকা নরম পোশাক পছন্দ করে। বিশেষ করে শীতের সময় এটা খেয়াল করুন। বেশি গরমকালে কাপড়ের কারণে যাতে ঘেমে না যায়। তাহলে ঠান্ডা বসে গিয়ে সর্দি-কাশি এমনকি নিউমোনিয়া বেঁধে যেতে পারে।
নবজাতকদের সাধারণত দিনে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। রাতে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা এবং দিনে ৮ ঘণ্টা—এভাবে ঘুমাতে পারে তারা।
৩ মাসের শিশুর ঘুমের অভ্যাস
এই পর্যায়ে শিশুরা খাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে না। তবে অবশ্যই ঘুমের জন্য পরিবেশ প্রস্তুত করতে হবে। শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময় চারদিকে ঘেরাও দেওয়া দোলনা বা বিছানায় রাখা ভালো। তাকে এভাবে বিছানা বা দোলনায় ঘুমানোর অভ্যাস করতে ঘুমপাড়ানি গান গাইতে পারেন বা কাছাকাছি শুধু দাঁড়িয়ে, শুয়ে বা বসে থাকুন।
তিন মাসের শিশুর সাধারণত প্রায় ১৫ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং দিনের বেলা ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে।
এই সময়টাতে শিশুর ঘুমের অভ্যাস ঠিক করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ একটা রুটিন বেঁধে তার দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করুন। রাত নামলেই তাকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করুন। ঘরের আলো কমিয়ে দিন। পরিবারের অন্য লোকদের জোরে কথা বলতে বারণ করুন।
প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে তাকে ঘুমানোরা চেষ্টা করুন। কুসুম গরম পানিতে গোসল, উষ্ণ খাবার, ডায়াপার পরিবর্তন করে এরপর ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন। এতে ভালো ঘুম হবে। শিশুকে ঘুমপাড়ানি গান শোনান, কপালে চুমু দিন। আমাদের দেশের শিশুরা সাধারণত মায়ের কাছেই ঘুমায়। আবার কিছু শিশু কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাতেও পছন্দ করে।
৬ মাসের শিশুর ঘুমের অভ্যাস
বিকাশের এই পর্যায়ে রাতের বেলা শিশুকে না খাওয়ানোই ভালো। ঘুমের মধ্যে খাওয়ালে বারবার ডায়াপার ভিজিয়ে ফেলতে পারে। এতে মাঝপথে ঘুম ভেঙে যেতে পারে। অর্থাৎ সারা রাত ঘুমানোর মতো যথেষ্ট বিরতি দিয়ে শিশুকে খেতে দেওয়া উচিত।
ঘুমের মধ্যে শিশু গভীর ঘুম থেকে হালকা বা প্রায় চেতন—এমন অবস্থার মধ্যে থাকবে। তাকে একা একা বিষয়টা হ্যান্ডল করতে দিন। অর্থাৎ অর্ধচেতন থেকে একা একা আবার গভীর ঘুমে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
আপনার ছয় মাসের শিশুর সাধারণত প্রায় ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এর মধ্যে রাতে ১০ ঘণ্টা এবং দিনের বেলা ৪ ঘণ্টা দরকার।
রাতে শিশুর কান্নার মানে কিন্তু এই নয় যে সে পুরোপুরি জেগে আছে। আপনি তার কান্নার আওয়াজের দিকে মনোযোগ দিন, তাহলে ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন সে ব্যথা পাচ্ছে বা ভয় পাচ্ছে কি না। যদি এমনটি মনে হয়, তাহলে প্রশান্তিমূলক (যেমন: শ…. শ….) শব্দ বা হালকা ম্যাসাজ দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করুন। তাকে বিছানা থেকে তুলে নেবেন না। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই সে ঘুমাতে যাবে। কান্না দীর্ঘ না হলে আপনি আবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতে পারেন।
এক বছরের শিশুর ঘুমের অভ্যাস
এই বয়সী একটা শিশুর জন্য ঘুমাতে যাওয়া মানে পার্টি মিস করা! বাবা-মা ভাই-বোন স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। এ কারণে ঘুমের সময় যতই এগিয়ে আসবে, ততই তার স্বাধীন হওয়ার অভ্যাস বা লক্ষণগুলো অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকবে। যেমন, যে শিশু দিনের বেলায় দুধ বা স্যুপ খায় কাপ বা গ্লাসে করে, সে রাতের বেলা (ঘুমানোর সময় হলে) বোতল (ফিডার) চাইতে পারে।
শিশুকে শান্ত রাখতে এবং তাকে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত করতে রুটিন মেনে কিছু কাজ করুন। এই সময়টাতে সবকিছু একটু ধীরগতির করে ফেলুন। খুব মজার বা উত্তেজনাকর কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। ঘুমপাড়ানির গল্প বলা সবচেয়ে ভালো কৌশল।
ঘুমানোর সময় তাকে একটু বেশি আদর দিন। কোলে নিয়ে মৃদু দোলাতে থাকুন। আদুরে কথা বলুন। এভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে এটি ঘুমানোর সময়।
আপনার এক বছর বয়সী শিশুর সাধারণত প্রায় ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ১১ ঘণ্টা এবং দিনে ৩ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
জেনে রাখা ভালো
শিশুদের আপনার বিছানায় ঘুমাতে দেওয়া বা টেলিভিশন চলে এমন কক্ষে ঘুমিয়ে রাখা ভালো নয়। শিশুর নিজের বিছানায় একা ঘুমাতে অভ্যস্ত করা সবচেয়ে ভালো। তবে অবশ্যই শিশুর বিছানার কাছাকাছি থাকুন।
সূত্র: প্যারেন্টস ম্যাগাজিন