নজরুল ইসলাম ও রিনা আক্তার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের নাল্লা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (১১), সুরাইয়া আক্তার (৩) ও এক ছেলে ছমিলকে (৭) নিয়ে তাঁদের সংসার।
সরেজমিন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দরিদ্র নজরুল ইসলাম ও রিনা আক্তার দম্পতি নাল্লা গ্রামে মানুষের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ ও পরিবারের চাহিদা মেটাতে নজরুল কখনো মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন, কখনো রিকশা চালাতেন। আবার কখনো অন্যের সেলুনে মজুরিভিত্তিক কাজ করতেন। এতে তাঁদের সংসারে অভাব মিটছিল না। নিজেদের ঘর না থাকায় মানবেতর বসবাস করতে হচ্ছিল।
পরে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর বরাদ্দ পায় পরিবারটি। এতে স্থায়ী থাকার জায়গা পেয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। একদিকে যেমন পেয়েছেন নিজেদের ঠিকানা, অন্যদিকে এই ঘরের এক কোণে সেলুন বসিয়ে নিজের কর্মস্থল তৈরি করেছেন। এতে সেলুনের ভাড়া হিসেবে তাঁকে বাড়তি কোনো ব্যয় করতে হচ্ছে না।
এই সেলুনে এলাকার কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রতিদিন ভিড় জমান। এলাকার মানুষের নরসুন্দরের কাজ করে নজরুল ইসলাম তাঁর এই সেলুন থেকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করছেন। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী রিনা আক্তার হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল লালনপালন করে এসব থেকে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ ও পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদার জোগান দিচ্ছেন।
রিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কোনো থাকার জায়গা ছিল না। আমরা অন্যের বাড়িতে কখনো ভাড়ায় আবার কখনো কাজের বিনিময়ে থেকেছি। আমার স্বামী ও আমি সন্তানদের নিয়ে মানুষের বাড়িতে থাকা নিয়ে অনেক মন্দ কথাও শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জমি ও ঘর উপহার দিয়েছেন। এখন আমরা নিজেদের ঠিকানা পেয়েছি। নিজের জমি ও ঘরে থাকি। এখন আর কারও কোনো কথা শুনতে হয় না। এখন আমরা সন্তানদের নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলতে পারি। এখানে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল লালনপালন করতে পেরে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছি।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে মানুষের বাড়িতে দিনমুজুরের কাজ করতাম। যখন যে কাছ পেতাম তখন তাই করতাম। নিজের কোনো ঠিকানা না থাকায় নিজের মতো করে কোনো কিছু করতে পারতাম না। আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে সেলুনের কাজ শুরু করেছি। নিজের ঘর হওয়ায় আলাদা কোনো পুঁজির দরকার হয়নি। এখন হিমশিম না খেয়েই পরিবারের সব চাহিদা মেটাতে পারছি। সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্নও দেখছি।