লক্ষ্মীপুরে আইন অমান্য করে শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তাতে দিন দিন এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে। বসতবাড়ির আশপাশে ইটভাটা গড়ে তোলার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে।
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। বেশির ভাগ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা থেকে তিন কিলোমিটার, সরকার স্বীকৃত সংরক্ষিত, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, স্কুল-কলেজ, কৃষিজমি, বনাঞ্চল এবং ৫০টির বেশি ফলের গাছ থাকলেও সেখানে ইটভাটা স্থাপন করা যায় না।
কিন্তু এসব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষিজমিতে নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে তুলছেন। পরিবেশ রক্ষায় সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে জিগজাগ পদ্ধতিতে ভাটা নির্মাণের নির্দেশনা থাকলেও ২০ ফুটের চিমনি দিয়ে ভাটা তৈরি করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অবৈধ ইটভাটা বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হয় কাঠ। এতে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ছাই থেকে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে শিশু, নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ নানা ধরনের জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পশ্চিম লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানান, অনেক প্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা গড়ে উঠেছে। যেভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চালানোর কথা, সেভাবে চালানো হচ্ছে না। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার পাশে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে ২০ ফুটের চিমনি দিয়ে ভাটার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে নানা ধরনের সবজি ও ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস ও অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত এসব ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান তিনি।
তবে লক্ষ্মীপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. অহিদুর রহমান পাটওয়ারী দাবি করেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু ভাটা মালিক তা না মেনে ইটভাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন সেটা না করে যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদেরও হয়রানি করছে। যেসব ইটভাটার অনুমোদন নেই, সেগুলো কেন বন্ধ হচ্ছে না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বাংলাদেশ নিউজ কে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনুমোদনবিহীন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post