আর এইচ মিলন
সরকার ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস নদীতে জাটকা (১০ ইঞ্চির নিচে ইলিশ) শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এই সময় জাটকা আহরণ, পরিবহন, বাজারজাত ও মজুত করা যাবে না। অথচ লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলব ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মেঘনা নদীর প্রায় ৫০টি মাছঘাটে অহরহ জাটকা বেচা-কেনা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীতে জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জেলেরা তা মানছেন না। তাঁরা ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ’ করে মাছ শিকারে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া সহজে লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা নৌপথকে জাটকা পাচারকারীরা নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে সরকার ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদনের লক্ষ্যে যে কর্মসূচি নিয়েছে, তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে জাটকা নিধন অব্যাহত থাকলে ইলিশের আকাল দেখা দেবে। ইলিশশূন্য হয়ে পড়বে নদী। অনতিবিলম্বে তা বন্ধের জোর দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে আছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার। তাঁদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তবে মতিরহাট ও মজুচৌধুরীরহাটের জেলে শরীফ হোসেন ও মাইনুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সহায়তার যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা-ও পান না অনেক জেলে। বিকল্প আয়ের পথ না থাকায় সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই তাঁরা নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন।
থেমে নেই জাটকা শিকার
এদিকে মজুচৌধুরীরহাট মাছঘাটের আড়তদার মিন্টু বলেন, এ বছর নদীতে মাছের আকার অনেক ছোট। ১০ ইঞ্চির নিচেই বেশির ভাগ ইলিশ। জেলে পরিবারগুলো সংসার চালাতে গিয়ে জাটকা শিকার করেন। তবে জাটকা ধরার জাল বানানোর কারখানা ও তা বেচা-কেনা বন্ধ না করলে, কোনোভাবেই জাটকা শিকার বন্ধ হবে না বলে তিনি জানান। আগে কারখানায় জাল বানানো বন্ধের দাবি জানান তিনি।
মতিরহাট মাছঘাটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা লিটন হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা নৌপথ দিয়ে জাটকা বেচা-কেনা হয়। এ নৌপথকে নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই এদিকে সতর্ক ও নজর দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
মজুচৌধুরীরহাট নৌ-পুলিশের তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি এ নৌপথ দিয়ে যেন জাটকা পাচার না হতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে।
জাটকা নিধনের কথা স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ নিউজ ২৪ কে বলেন, জনবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
তারপরও প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে জেল-জরিমানাসহ বিপুল পরিমাণ জাটকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া নদীতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post