পাগলাটে এক শটেই নিজেকে অনন্য করে তুললেন ইবাদত! ক্রাইস্টচার্চে টেস্টে আজ দ্বিতীয় ইনিংসের ৮০তম ওভারে বলটা আকাশে তুলে দিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। সে শটই ভয়ংকর চাপে ফেলে দিল টম ল্যাথামকে। এমন ক্যাচ অহরহই ধরেন। কিন্তু আজ সে মুহূর্তে যে চাপ অনুভব করেছেন, সেটা গত দুই দিনে একবারও পেয়ে বসেনি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ককে। যদি ফসকে যায়!
না, ফসকায়নি। ঝাঁপ দিয়ে ঠিকই বলটা তালুবন্দী করেছেন ল্যাথাম। টেস্ট ক্রিকেটে শেষবারের মতো মাঠে নামা রস টেলরও নিজের অন্তিম স্পেল শেষ করলেন অবিশ্বাস্য এক ফিগার নিয়ে—০.৩-০-০-১। ক্যারিয়ারের শেষ বলে উইকেট পাওয়ার কীর্তি অনেক আছে। গ্লেন ম্যাকগ্রা, মুত্তিয়া মুরালিধরনদের মতো দুজন আছেন সে তালিকায়। কিন্তু নিজের শেষ টেস্টে কেউ কোনো রান না দিয়ে উইকেট? ইতিহাসের প্রথম কোনো বোলার হিসেবে এ কীর্তি শুধুই রস টেলরেরে। ইবাদতকে কীভাবে ভুলবেন টেলর?বিজ্ঞাপন
সিরিজের প্রথম টেস্টেই টেলর ও ইবাদতের দ্বন্দ্বটা বেশ জমে উঠেছিল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং–ধসের মধ্যেও লড়ছিলেন টেলর। কিন্তু সেই লড়াকু ইনিংসেও ইবাদতকে সামাল দিতে পারছিলেন না টেলর। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, বাংলাদেশি পেসারের বলে অস্বস্তি হচ্ছে তাঁর। ইবাদতের কাছে সেটা স্বীকারও করেছেন টেলর। ম্যাচ শেষে এক সাক্ষাৎকারে ইবাদত বলেছেন, ‘আমি রস টেলরকে বললাম, “আপনি তো ভালোই মারেন, আমাকে কেন মারছেন না?” বললেন, “ভাই, এই উইকেটে যেভাবে বল করলে, কেউই তোমাকে মারতে পারবে না।”’
মঙ্গানুইয়ে শেষ দিনে টেলরের লড়াই ইবাদতই থামিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ও এসেছে টেলর দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ায়। ক্রাইস্টচার্চে নিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামার সময় টেলরকে গার্ড অব অনার দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত টেলর গতকাল ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আজ ক্রিজে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ দল যেভাবে সম্মান দেখিয়েছে, সেটি সত্যিই নাড়া দিয়েছে। এটা আমি কখনো ভুলব না।’
টেলর বাংলাদেশ দলের মধ্যেও যেন তাঁকে আলাদা করে মনে রাখতে পারেন, সেটিই নিশ্চিত করেছেন ইবাদত। দ্বিতীয় টেস্টে ‘মারতে না পারা’ ইবাদতের দেখা মেলেনি। প্রথম ইনিংসে প্রায় দেড় শ রান দিয়েছেন এই পেসার। তবে ঠিকই টেলরের শেষ ঘাতক হিসেবে নিজের নামটা স্থায়ী করে নিয়েছেন। নিজের শেষ ইনিংসে টেলরকে ২৮ রানের বেশি করতে দেননি ইবাদত।
তবু হয়তো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ল্যাথাম সেটি হতে দেননি। ক্রিজে শেষ উইকেট জুটি, দ্বিতীয় নতুন বল পেতে আর মাত্র এক ওভার বাকি, এ অবস্থায় বল তুলে দেওয়া হয়েছিল টেলরের হাতে। মাঠের দর্শকও মজা পেয়ে গর্জন তুলেছেন টেলরের প্রতিটি বলে।
তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দিয়ে টেলরকে বিদায়ী উপহার দিয়েছেন ইবাদত। ম্যাচ বলটা বুঝে নেওয়া টেলর নিজের বিদায়ী ক্ষণ নিয়ে বললেন, ‘এমন পরিস্থিতি যত বেশি পাবেন, আপনি উইকেট পাবেন! আমরা দারুণ খেলেছি, বাংলাদেশ আমাদের চাপে ফেলে দিয়েছিল (প্রথম ম্যাচে হারিয়ে)।’
ইবাদতের উইকেট দিয়ে একটা রেকর্ডও হয়ে গেল। এত দিন টেস্টে দুই উইকেটপ্রাপ্তিতে সবচেয়ে লম্বা বিরতি ছিল মাহেলা জয়াবর্ধনের (৮০ টেস্ট)। ২০১০ সালে আহমেদাবাদে ভারতের শান্তকুমারন শ্রীশান্তকে সর্বশেষ আউট করেছিলেন টেলর। এরপর ৮৫ টেস্ট পর আবার টেস্টে উইকেটের দেখা পেয়েছেন টেলর।
বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন, সেটা তখনো জানতেন না টেলর। তবে এভাবে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরে বেশ তৃপ্ত ১১২টি ম্যাচ খেলা টেলর, ‘টম (ল্যাথাম) বলছিল, এই ম্যাচে ওই মুহূর্তেই সবচেয়ে বেশি চাপে ছিল সে! দারুণভাবে শেষ হলো সব।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: রাকিব হোসেন মিলন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: দিপা আক্তার
মোবাইলঃ 01634559838
মোবাইলঃ 01944701754
Email:mrheng1971@gmail.com
২০২২. সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।দৈনিক বাংলাদেশ নিউজ
Developer by: Md Tushar Emran