সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টুকেরগাঁও গ্রামের কালী মন্দিরে ভাঙা প্রতিমা। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা ছবিপ্রথম আলো
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে পরাজিত এক সদস্য প্রার্থীর লোকজনের হামলায় একই পরিবারের চারজন আহত হয়েছেন। এ সময় গ্রামের মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত চারজনকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও গ্রামে গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল ওই উপজেলার সাতটি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।বিজ্ঞাপন
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ তরফদার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মারধরের ঘটনা সত্য। পুলিশ রাতেই সেখানে গিয়েছিল। সবার সঙ্গে কথা বলেছে। তবে কেউই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের কথা তখন বলেননি। প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি সত্য নয়। এটা একটা গুজব।’ তবে ওসি বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
ওই গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে হামলার পাশাপাশি মন্দিরের প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয়েছে। ভোট শেষে রাত নয়টার দিকে পরাজিত সদস্য প্রার্থী রসুলপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের পক্ষের লোকজন টুকেরগাঁও গ্রামের সুকেশ বর্মণের বাড়িতে এ হামলা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক সুবাস পুরকায়স্থ বলেন, গ্রামের বাসিন্দারা বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা সেটি পুলিশকে জানান। ওই গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে হামলার পাশাপাশি মন্দিরের প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সমীর রায় বলেন, ঘটনা শুনে আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁরাও দেখেন মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টুকেরগাঁও গ্রামটি বড়দল দক্ষিণ ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। গতকাল ভোটে এই ওয়ার্ডে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন টাকাটুকিয়া গ্রামে মো. জহুর আলম। ভোট শেষে রাত নয়টার দিকে পরাজিত সদস্য প্রার্থী রসুলপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের পক্ষের লোকজন টুকেরগাঁও গ্রামের সুকেশ বর্মণের বাড়িতে যান। এ সময় তাঁরা ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সুকেশ বর্মণকে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ওই পরিবারের লোকজনকে মারধর করেন। এতে সুকেশ বর্মণ (৪৫), তাঁর স্ত্রী কেলন রানী বর্মণ (৩৫), ছেলে শিপন বর্মণ (১৭) ও মেয়ে রিতু নারী বর্মণ (২৬) আহত হন।
ওই পরিবারের সদস্যরা বলেন, আলাউদ্দিনের লোকজন তাঁদের ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলে প্রথমে গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, বাড়ির পাশে থাকা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা।
নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য জহুর আলম বলেন, ‘আলাউদ্দিন নির্বাচনে হেরে পাগল হয়ে গেছেন। গতকাল রাতে টুকেরগাঁও গ্রামের নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে হামলা করেছেন তাঁর লোকজন। এসব লোকজন নাকি তাঁকে ভোট দেননি। আমি আক্রান্ত লোকজনকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমরা তাঁদের পাশে আছি।’
তবে আলাউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের আগের দিন থেকে অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছি। আমার গ্রামের আরও তিনজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁরাও হেরেছেন। এখন পরাজিত ও জয়ী প্রার্থী মিলে আমাকে শায়েস্তা করার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করছেন। আমি এসবের কোনো কিছুই জানি না। মূর্তি ভাঙার কথা বলে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন তাঁরা।’
Discussion about this post