
রাকিব হোসেন মিলন
সিনিয়র রিপোর্টার
মেঘনার তীরে গড়ে ওঠা জনতা বাজার শুধু একটি বাজার নয়—এটি হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ও সামাজিক মিলনমেলা। কিন্তু সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই হাঁটের দোকান উচ্ছেদের যে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েছেন শত শত দোকানদার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। দোকান হারানোর শঙ্কায় অনেকেই আজ ঘুম হারিয়েছেন, দুশ্চিন্তায় পরিবার চালানোই হয়ে উঠেছে কঠিন।

বলা চলে, এই হাঁটটি বহু নদীভাঙা মানুষের স্বপ্ন গড়া একমাত্র আশ্রয়স্থল। অনেকে জীবনের সব হারিয়ে এসে এখানে একটি ছোট দোকান গড়ে কোনোমতে সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। এখন যদি সেই দোকান ভেঙে ফেলা হয়, তবে তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ থাকবে না—এমনটাই জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। শুধু দোকানদার নয়, এই হাঁট ঘিরেই গড়ে উঠেছে এলাকার সামগ্রিক কর্মসংস্থান, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার, যোগাযোগ ও সামাজিক সম্প্রীতির নেটওয়ার্ক।
স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—এই উচ্ছেদে সরকারের কী লাভ? যেখানে এই দোকানগুলো কারো কোনো ক্ষতির কারণ নয়, সেখানে কেন এতগুলো সংসার ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? তাছাড়া সরকার যদি এখানে ভবিষ্যতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনাও না করে থাকে, তাহলে উচ্ছেদের পেছনে যুক্তি কোথায়? এক দোকানির ভাষায়, “আমার একটাই সম্বল এই ছোট দোকানটা, সেটাও যদি চলে যায়, তাহলে আমি আর কীভাবে বাঁচব?”
মানবিক প্রশ্নগুলো আরও গভীর। এতগুলো মানুষ—যারা অনেকেই বাড়ি-ঘর হারিয়ে এই হাঁটে ঠাঁই নিয়েছেন, যারা দিনে এনে দিনে খায়, যাদের নেই বিকল্প কোনো আয়—তাঁদের কথা চিন্তা না করেই যদি দোকান উচ্ছেদ করা হয়, তবে সেটা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বরং এক ভয়াবহ মানবিক সংকট ডেকে আনবে। সরকারের উচিত হবে এই বাজারটি ভেঙে না ফেলে মানবিক বিবেচনায় দোকান মালিকদের একটি স্থায়ী সমাধান দেওয়ার চিন্তা করা। অনেকেই প্রস্তাব করছেন, যৌক্তিক অর্থ নির্ধারণ করে লিজ দিয়ে দোকানগুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে উচ্ছেদ এড়ানো সম্ভব।

সরকার ও ওয়াপদার প্রতি আকুল আবেদন—মানুষের জীবন, স্বপ্ন ও সংসার যেন কাগজের এক টুকরো নোটিশে ভেঙে না যায়। দয়া করে তাঁদের বাঁচার অধিকার রক্ষা করুন। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য ওয়াপদার হাঁট শুধু বাজার নয়, এটা তাঁদের অস্তিত্বের একমাত্র ভরসা।





Discussion about this post