
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের আনন্দের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ও সেতুর অবকাঠামো ঘুরে দেখতে জাজিরা প্রান্তে ঢল নেমেছে হাজারো মানুষের
জুনে পদ্মা সেতুটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এ খবরে বেশ উৎফুল্ল। ঈদের আনন্দের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত সেতু ও সেতুর অবকাঠামো ঘুরে দেখতে তাই জাজিরা প্রান্তে ঢল নেমেছে হাজারো মানুষের।
ঈদের দিন বিকেল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পদ্মা সেতু এলাকায় ছুটে আসছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন, ঘুরে দেখছেন সেতুর সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, রেল প্রকল্প, নদী শাসনসহ নানা অবকাঠামো।
নিরাপত্তার কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবকাঠামোর কাছে কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। তাই উৎসুক মানুষ দূর থেকেই সেতুর অবকাঠামো দেখছেন, ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। দোকানিরা নানান পসরা সাজিয়ে বসেছেন সড়কের পাশে।
বরিশালের বানারিপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন (৩৩) ফেনীতে সরকারি একটি দপ্তরে কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেছেন। ঈদের ছুটির সময়গুলো উপভোগ্য ও স্মৃতিময় করে তুলতে বুধবার দুপুরে এসেছেন পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পথে খুব একটা আমার আসা হয়নি। চাঁদপুর হয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করি। বন্ধুদের কাছে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের গল্প শুনেছি। আজ নিজের চোখে দেখলাম। আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। নিজের ট্যাক্সের টাকায় নিজেদের বৃহৎ সেতু হয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছি সেতু দিয়ে পদ্মা পার হওয়ার।’
জুয়েলারি ব্যবসায়ী সিরাজুল হকের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া এলাকায়। ঈদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত থেকে দুই ফুফাতো ভাই তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। সিরাজুল ওই দুই আত্মীয়সহ ৮ বন্ধুকে সাথে নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন। সারা দিন এক্সপ্রেসওয়ে, টোলপ্লাজা, সংযোগ সড়ক, রেলের ভায়াডাক্ট, পদ্মা তীরে নদী শাসন এলাকা ঘুরে দেখেছেন।
সিরাজুল হক বুধবার বিকেলে বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার সময় লঞ্চ থেকে পদ্মা সেতু দেখতাম। আজ এসেছি তীরে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বপ্নের সেতু দেখার জন্য। সেতুর কাছে যেতে পারিনি। দূর থেকে দেখেছি। ছবি তুলেছি, ভিডিও করেছি। বিদেশি দুই ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে অন্য রকম আনন্দের একটি দিন কাটিয়েছি। তারাও দেখেছে বাংলাদেশ আজ মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে।’
নিরাপত্তার কারণে পদ্মা সেতুর অবকাঠামোর কাছে কাউকে যেতে না দেওয়ায় মানুষ দূর থেকেই সেতুর অবকাঠামো দেখছেন, ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন
শিবচর উপজেলা সদরের একটি জেন্টস পার্লারের কর্মী ইমন হাসান বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু এলাকায়। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাঁর প্রিয় গিটার। বন্ধুদের সঙ্গে সেতুর সংযোগ সড়কে বসে গিটার বাজিয়ে গান গাচ্ছিলেন। অনেক দর্শনার্থী তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন। ইমন হাসান বলেন, ‘টানা এক মাস দিনে-রাতে পারলারে কাজ করে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। বাড়িতে ঈদ শেষ করে ছুটে এসেছি পদ্মা সেতুর কাছে। সেতুর সড়কে বসে দখিনা বাতাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে গিটার নিয়ে বসে পড়েছি। ভাল লাগছে, বন্ধুরা মিলে সুন্দর একটা বিকেল কাটিয়ে গেলাম।’
রাজশাহীতে কাজ করেন ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলা সদরের মেয়ে রেহানা সুলতানা। তিনি শিশুসন্তান, শাশুড়ি, জা, ননদসহ অন্তত ২০ আত্মীয়কে নিয়ে এসেছেন পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে। রেহানা সুলতানা বলেন, ‘শুনেছি দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। তখন গাড়ি দিয়ে যাব। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দিয়ে হাঁটার একটা বাসনা আমার ছিল। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সন্তানদের হাত ধরে হেঁটেছি, তাদের সেতু দেখিয়ে বলেছি, ওই দেখ নিজেদের টাকা গড়ে তোলা স্বপ্ন। আগামীতে এ স্বপ্ন তোমাদেরই টিকিয়ে রাখতে হবে।’
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (মূল সেতু) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোট টাকা। এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ, নদী শাসন কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে।





Discussion about this post